ভ্যান চোর সন্দেহে তরুণকে গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১

ভ্যান তোর  সন্দেহে তরুণকে গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন, গ্রেপ্তার ১

গ্রেপ্তার

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ভ্যান চোর সন্দেহে এক তরুণকে গাছের ডালে দড়ি দিয়ে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। গত বুধবার সকালে উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বাগদহ গ্রামের একটি দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার তরুণের নাম ইউসুফ মল্লিক (১৯)। তিনি উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বাগদহ গ্রামের শরীফ মল্লিকের ছেলে। তিনি পেশায় বাদাম বিক্রেতা। গলায় বাদামের ডালা ঝুলিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে তিনি বাদাম ও বাদাম-নারকেলের খাজা বিক্রি করেন।

ইউসুফ মল্লিককে গাছের ডালে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতনের একটি ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার ইউসুফ মল্লিকের বাবা বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।গ্রেপ্তার ব্যক্তি হলেন আহম্মদ আলী বেগ (৬৬)। তিনি উপজেলার বাগদহ গ্রামের মোকছেদ আলী বেগের ছেলে। তিনি উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বেগের বড় ভাই।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ৫৮ সেকেন্ডের। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি গাছের উঁচু ডালে একটি নাইলনের দড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। দড়ির এক প্রান্ত দিয়ে এক তরুণের দুই পা একসঙ্গে বাঁধা আছে। তরুণের খালি গা। পরনে জিনসের প্যান্ট। ওপরের দিকে তরুণের দুই পা এবং মাথা নিচের দিকে। পাশে এক যুবক নাইনলের দড়ি দিয়ে ঝুলে থাকা তরুণের দুই হাত বাঁধার চেষ্টা করছেন। লুঙ্গি পরিহিত, কোমরে গামছা বাঁধা খালি গায়ের এক ব্যক্তি লম্বা একটি লাঠি দিয়ে ঝুলন্ত তরুণটির পশ্চাৎদেশে একের পর এক আঘাত করছেন। নির্যাতনকারীরা তাঁর কাছ থেকে কিছু একটা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করছেন। উল্টো করে ঝুলে থাকা তরুণটি বাঁচার জন্য আকুতি করছেন। গোঙাতে থাকা তরুণটি একপর্যায়ে কাতর স্বরে বলতে থাকেন, ‘আমি করিছি, আমি কত্তিছি। ও মা...ও মা।’

এরপর তাঁর দুই হাত বাঁধা দড়ির অপর প্রান্ত দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। ১০ থেকে ১২ জন পাশে দাঁড়িয়ে তরুণকে নির্যাতনের দৃশ্য দেখছে। তাদের বেশির ভাগ শিশু-কিশোর। তাদের একজন হে হে হে করে হাসছে। একজন বলছে, তোর মতো কত পাগল ভালো করিছি।

তরুণের বাবা শরীফ মল্লিক বলেন, ‘আমার ছেলে ইউসুফের বুদ্ধি কম। বুধবার ভোরে ছেলে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় আহম্মদ আলী বেগ, ইদ্রিস আলী খাঁ(৬০), সবুজ মুন্সী (৩২), রনিসহ (৩৬) কয়েকজন তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ইদ্রিস আলী খাঁর দোকানের সামনে নিয়ে যান। সেখানে ভ্যান চুরির সন্দেহে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রথমে তাকে নাইলনের দড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর দোকানের পাশে একটি গাছের ডালের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে আহম্মদ আলী বেগ লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। আমার ছেলে নির্দোষ। সে চুরির সঙ্গে জড়িত না।’

চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক শেখ বলেন, চলিশিয়া ইউনিয়নের বাগদহ গ্রামের ভ্যানচালক ইসমাইল হোসেনের একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায়। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ইসমাইল প্রতিবেশী শরীফ মল্লিকের ছেলে ইউসুফ মল্লিককে সন্দেহ করেন। পরদিন বুধবার সকালে ইউসুফকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দড়ি দিয়ে উল্টো করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এলাকার দুই তরুণ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউসুফকে সেখান থেকে উদ্ধার করে তাঁর বাবার কাছে পৌঁছে দেন।

Post a Comment

0 Comments