বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪,
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দুদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা হচ্ছে। হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে—এসব বিষয় বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে–বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে একধরনের উত্তাপ তৈরি হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল সোমবার রাত পৌনে দুইটার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, হাজারো শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জন-আকাঙ্ক্ষার দলিলস্বরূপ ‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ অত্যাবশ্যক ছিল। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর বর্তায়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়োপযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো।
এর আগে গত রাত সোয়া ৯টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের জরুরি ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমতে৵র ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে।
ঘোষণাপত্র নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
প্রেস উইংয়ের ব্রিফিং শেষে গত রাত ১০টার পর জরুরি বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। কখনো একসঙ্গে, কখনো পৃথকভাবে নিজ নিজ প্লাটফর্মের নেতারা বৈঠক করেন। এর রাত পৌনে একটার দিকে প্রথমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্র নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের জায়গা থেকে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। এটা তাঁদর প্রাথমিক বিজয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমরা পূর্ববর্তী যে কর্মসূচি দিয়েছি, আমরা বিপ্লবীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হব। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র আসবে, কিন্তু তাই বলে আমাদের একত্রিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না। আগামীকাল (আজ) শহীদ মিনারে আহত থেকে শুরু করে শহীদ পরিবার এবং ঢাকা শহরের মা ও বোনেরা যেভাবে ৫ আগস্ট রাজপথে নেমে এসেছিল, সেভাবে প্রোক্লেমেশনের (ঘোষণাপত্র) পক্ষে রাজপথে নেমে আসবে।’
এ সময় এক সাংবাদিক হান্নান মাসউদকে প্রশ্ন করেন, মঙ্গলবার শহীদ মিনারে ঘোষণাপত্র পাঠ হবে কি না। এ সময় হান্নানের পাশ থেকে একজন হাত নেড়ে ‘না’ বলেন। সঙ্গে সঙ্গেই হান্নানের নেতৃত্বে স্লোগান শুরু হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতারা জানান, রাত সোয়া একটার পর তাঁরা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবেন।
সরকারকে সাধুবাদ
রাজনীতিতে নানা আলোচনা
যেভাবে বিষয়টি সামনে এল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা গত শনিবার রাতে হঠাৎ করেই ফেসবুকে জানান, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা হবে। তাদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এ বিষয়ে শনিবার রাতে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন। এর একটি ‘কমরেডস, নাউ অর নেভার’ (বন্ধুরা, হয় এখন নয়তো কখনোই নয়); অন্যটি হলো ‘প্রোক্লেমশন অব জুলাই রেভল্যুশন’ (জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র)। মূলত এরপরই বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা তৈরি হয়।
ফেসবুকে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, এই উদ্যোগের (জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র) মধ্য দিয়ে বর্তমান সংবিধান স্থগিত বা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না। কেউ কেউ উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে হয়তো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিপ্লবী সরকারে রূপ নিতে যাচ্ছে। অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা শুরু থেকেই এ ধরনের সব সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
0 Comments