মার্চ ফর ইউনিটি’ থেকে দাবি নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কার
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, তা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা।
বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা।
সংস্কারের পর নির্বাচন করা।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫,
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশ থেকে আসা মানুষের ঢল। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশ থেকে আসা মানুষের ঢল। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
ঘটনাবহুল ২০২৪ সালের শেষ বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো ছাত্র-জনতার সম্মিলন ঘটেছিল। বিপুল এ সমাগমে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে। শহীদ মিনার এলাকা কখনো উত্তাল হয় ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার’ এমন স্লোগানে। কখনো স্লোগান ওঠে ‘জুলাইয়ের প্রেরণা, দিতে হবে ঘোষণা’।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি আহ্বান বা কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশ থেকে আসা মানুষের ঢল নামে শহীদ মিনার এলাকায়। এ কর্মসূচির নাম ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা)। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ কর্মসূচি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা মোটাদাগে চারটি দাবি সামনে এনেছেন। এর প্রথমটি হচ্ছে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিয়েছে, তা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি হলো, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা। তৃতীয় দাবি, বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। চতুর্থ দাবি, সংস্কারের পর নির্বাচন করা।
মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় আসতে শুরু করেন। দুপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন থানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এই আয়োজনে যোগ দেন। বেলা যত গড়ায়, লোকসমাগম তত বাড়তে থাকে। বেলা তিনটা নাগাদ নীলক্ষেত, পলাশী, দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল ও শাহবাগের রাস্তাগুলো দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢল গিয়ে মেশে শহীদ মিনারের মার্চ ফর ইউনিটির সমাবেশে।
সমাবেশের মঞ্চে ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন গত ৩ আগস্ট ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিমের সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কেরা। মঞ্চে ঘোষণা দেওয়া হয়, ১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কের সবাই মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন। মঞ্চে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাও ছিলেন। মঞ্চের পাশে একাধিক ডিজিটাল স্ক্রিন ছিল। সেখানে সমাবেশের কার্যক্রম সরাসরি প্রচার করা হচ্ছিল।
সমাবেশে আগতদের অনেকের হাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘টু জিরো টু ফোর, ফ্যাসিবাদ নো মোর’, কোনোটিতে ছিল ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘সারা বাংলা কারাগার, হাসিনা তুই স্বৈরাচার’ প্রভৃতি।
ঢাকার বাইরে থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের বহনকারী কিছু বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে রাখা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠেও কিছু গাড়ি রাখা হয়। সমাবেশের ছবি ও ভিডিও ধারণ করার জন্য শহীদ মিনারের আকাশে উড়ছিল ড্রোন।
এর আগে গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেওয়া হবে। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে একধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে গত সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের জরুরি ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমতে৵র ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে।
প্রেস উইংয়ের ব্রিফিংয়ের সাড়ে চার ঘণ্টা পর সোমবার রাত পৌনে দুইটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি নামের কর্মসূচি পালন করবে তারা।
আরও পড়ুন...
১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির দাবি
0 Comments